চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
বাংলাদেশে ভারতীয় টকশোতে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে- ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলছে নির্যাতন। দেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনও নিরাপত্তা পাচ্ছে না।’ আর এমন আজগুবি প্রোপাগান্ডা যিনি ছড়িয়েছেন তিনি ভারতীয় নাগরিক সায়ন ঘোষ। বুধবার সকালে বাংলাদেশের ৩ দিন ভ্রমণ শেষে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পুলিশ চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। সয়ন ঘোষ (২৬) ভারতের কলকাতার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেলঘরিয়া থানা শহরের সুকান্ত ঘোষের ছেলে। তার পাসপোর্ট নাম্বার Z 6653103। তার এই ঘন ঘন বাংলোদেশ ভ্রমন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন তিনি ঘন ঘন বাংলাদেশে আসেন।

দর্শনা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র জানাজায় গত ২০২৪ সালের ২৩ নভেম্বর ভারতীয় নাগরিক কলকাতার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেলঘরিয়া থানা শহরের সুকান্ত ঘোষের ছেলে সায়ন ঘোষ টুরিস্ট ভিসায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। গত ৩০ নভেম্বর দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন শেষে সীমান্ত দিয়ে ভারতে গেদে প্রবেশ করে। এছাড়া তিনি এ বছরের ২৭ মার্চ একই ভিসায় বাংলাদেশ ভ্রমণ করে ২৯ মার্চ ভারতে ফিরে যান। এরপর তিনি গত সোমবার ৭ এপ্রিল বেনাপোল বন্দর দিয়ে আবারও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ৩ দিন ভ্রমণ শেষে শুক্রবার সকালে দর্শনা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
এ বিষয়ে দর্শনা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র জানান জায় ২০২৪ সালের নভেম্বরে সায়ন ঘোষ ৮ দিন বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। এরপর তিনি গত মার্চ ৩ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করে ভারত ফিরে যান। এছাড়া চলতি এপ্রিল মাসেও তিনি ৩ দিন বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন।

জানা গেছে ভারতীয় কলকাতা সহ কয়েকটি টিভি চ্যানেল টকশোতে অংশ নেয় সয়ন ঘোষ। এসময় তিনি অভিযোগ করেন গত ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশে ঢাকা জুরাইনের বাগানবাড়ি অবস্থান করছিলেন। এসময় তাকে হিন্দু বলে স্থানীয়রা পাথর ও ছুরি দিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। তিনি আর বলেন আমার পকেট থেকে একটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। তিনি থানায় গেলে কোনও থানায় অভিযোগ নেয়নি। বিভিন্ন থানায় থানায় ঘুরে শেষে একটি হসপিটালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কোনও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপদ নয়। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন কোনও নিরাপত্তা দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন টেলিভিশনে।

এ ঘটনার পর চলতি ২০২৫ সালের মার্চ ও এপ্রিলে সায়ন ঘোষ দুইবার তিনদিন করে আবারও বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। এ ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুক্রবার তিনি দর্শনা বন্দর দিয়ে ভারতের প্রবেশের সময় স্থানীয় সাংবাদিকরা তার সাথে কথা বলেন। ওইসময় তিনি বলেন, ২৯ নভেম্বর আমাকে হিন্দু বলে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করা হয়। আমি পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে কোনও সহযোগিতা পাইনি। তাই আমি ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়ায় টকশোতে অংশ নিই। টকশোতে আমার এই ঘটনার বর্ণনা করার পর কলকাতায় ভারতীয় বাংলাদেশী হাইকমিশনারের দপ্তরে একটা লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। এখন পর্যন্ত এই ঘটনাযর কোনও সুরাহ পাইনি। এই ঘটনার পর তিনি দুইবার বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছেন, তার কোন অসুবিধা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত দু’মাসে দু’বার বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছি, এখন বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি নাই। পুলিশ আইনশৃঙ্খলাবা সাধারণ মানুষ কেউ কোনও হয়রানি অসুবিধা করেনি বলে জানিয়েছেন।

এ সময় উপস্থিত দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব পলাশ আহমেদ উপস্থিত থেকে বলেন, সায়ন ঘোষ বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি খারাপ, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় নিরাপদ নয়, এবং আমাদের বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে কটাক্ষ করে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচার করলেন। তারপরও তিনি দু‘বার কেন বাংলাদেশে এসে ভ্রমণ করে ঘুরে গেলেন। এর মধ্যে এসে তিনি কোনও থানাতেও অভিযোগ করেননি। বাংলাদেশে কোনো হিন্দু নির্যাতন নিপীড়ন শিকার হননি সয়ন ঘোষ কোন ছিনতাইকারির কবলে পড়েছিলো বাংলাদেশের অবস্থা এত খারাপ বলে প্রচার করলেন। তারপরও তিনি গত দুই মাসে দুই বার ৩ দিন করে বাংলাদেশে আসলেন- এটা গভীর ষড়যন্ত্র বলেও মন্তব্য করেন তিনি।