চুয়াডাঙ্গা কেরু এন্ড কোম্পানির এমডির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ।
- আপডেট সময় : ১১:৪৫:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ ৪৭৮ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিনিধি:-
বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদশে) লিমিটেড। সরকারের রাজস্ব আদায় থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সঙ্গে কাজ করলেও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর রাব্বিক হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভোল পাল্টে তার এবং দোসরদের স্বৈরাচারী কর্মকান্ডে কেরু কোম্পানি এবং মাদকদ্রব্য নিয়য়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কোম্পানি অধীন ১৩ টি ওয়্যার হাউস আছে। তবে হঠ্যাৎ করে সবগুলো কর্মকর্তাকে নতুন এমডি আসার পর বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ওয়্যার হাউসে বর্তমানে কর্মরত হারুন অর রশিদকে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে বদলি করা হয়েছে। সৌমিক হাসান রুপমের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। তার চাহিদা মেটাতে না পারায় রুপমকে ঢাকা থেকে কম গুরুত্বপর্ণ পঞ্চগড় বন্ধ সুগার মিলে বদলি করা হয়। রুপম কেরু অ্যান্ড কোম্পানির আসন্ন সিবিএ নির্বাচনে সাধারণ সম্বপাদক প্রার্থীও ছিলেন। মোঃ আব্দুল আল মামুন এর কাছ থেকে লিপিকা ভদ্র কে দেওয়ার জন্য পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দাবি করেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন তার চাহিদা মেটাতে না পারাতে তাকে তিন ধাপ ডিমোশন দিয়ে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে বদলি করেন, মো. দেলোয়ার হোসেনকে বরিশাল ওয়্যার হাউস থেকে নাটোর সুগার মিলে, আলমগীর হোসেনকে পাবনা থেকে নাটেরের গোপালপুর সুগার মিলে, গোডাউন ইনচার্জ সাজেদুর রহমান তপনকে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে। এছাড়া আর কয়েকজনকে অনৈতিকভাবে কোন কারণ ছাড়াই ওয়্যার হাউস থেকে সরিয়ে বন্ধ বা কম গুরুত্ব বন্ধ সুগার মিলে বদলি করেন।
গত ২৮ এপ্রিল এক অফিস নোটিশে তাদের বদলি করা হয়। যাদের বেশিরভাগই শেখ হাসিনা সরকারের সময় দোসর হিসেবে কাজ করেছে। যা অধিদপ্তরে ব্যাপক প্রচার রয়েছে। সংশ্লিরা অভিযোগ করছেন, যাদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই তাদের তিনি গুরুত্বপূর্ণ চেয়ার দিয়েছেন, এজন্য প্রতিষ্ঠানের বাংলা মদের বেচা বিক্রি বহুলাম সে কমে গেছে। প্রতিটি বদলি থেকে সর্বনিন্ম ২০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই টাকা আবার তিনি সরাসরি গ্রহণ না করে তারই আনুগত ও করপোরেশনের সাবেক চ্যোরম্যান ( বর্তমানে বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত) লিপিকা ভদ্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে বোিরয়ে আসবে। এখানেই ক্ষ্যন্ত হননি মীর রাব্বিক। মৌসুমের আখ মাড়াইয়ের জন্য তিনি কখন মাঠ পর্যায়ে যাননি। এসি রুমে বসে তিনি শুধু আদেশ নির্দেশ দিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানে আগে যারা গুরুত্বপূর্ণ এই পদে ছিলেন তারা আগে মাঠ পর্যাায়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষিদের সঙ্গে কথা বলতেন। আখ চাষে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে নানা প্রণোদনা দিতেন। এ কারণে আখ চাষও হতো চাহিদার চেয়ে বেশি। কিন্তু মীর রাব্বিক দায়িত্ব নেয়ার পর নিয়মিত অফিস করলেও বসে থাকেন এসি রুমে। চাষিদের কাছে যাওয়াতো দূরের কথা তার অফিসে আসলেও তিনি তাদের সাথে দেখা করেনন না, এমনকি চাষিদের সঙ্গে ঠিক মত কথাও বলেন না। এ কারণে ওই জেলায় আখ চাষিরা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকার আখ মাড়াই মৌসুমে চাষীদের আখ চাষে প্রলুব্ধ করতে নানা ধরণের প্যাকেজ, প্রচার-প্রচারণাসহ প্রান্তিক চাষীদের চাহিদা মোতাবেক উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে থাকে। কিন্তু তিনি যোগদান করার পর এ ধরণের কর্মসূচি তেমন নেননি। তিনি যোগদানের পর গত মাড়াই মৌসুমে ৬২ জনকে চুক্তিভিত্তিক চাকুরি দেন, অভিযোগ আছে এখান থেকে তিনি জনপতি পাঁচ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন। চাষীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা, অফিসে কোন চাষী আসলে তাকে চেয়ারে বসতে না বলা, চেয়ারে বসে পড়লেও তাকে ধমক দিয়ে তুলে দেওয়া এবং অপমানজনক কথাবার্তা বলা এ কারণে দক্ষ চাষীরা আখ চাষ বন্ধ করে দেন। এ কারণে এ বছর আখ চাষ কম হয়। চাষ কম হওয়ায় উৎপাদনসহ কেরু এন্ড কোম্পানির বাৎসরিক আয়ে ব্যাঘাত ঘটছে। সরকার বঞ্চিত হয়েছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে।
ডিহি ইউনিয়নের চাষী মো. সামসুল হক বলেন, অনেক আগে থেকেই আমি আখ চাষ করে এখানে সরবরাহ করতাম। কিন্তু নতুন এমডি আসার পর আমাকে বাদ দিয়ে নতুন চাষি নির্ধারণ করেছেন। অথচ আমার সঙ্গে কোন যোগাযোগই করেননি। এ কারণে আমি না শুধু, আমার মতো আরও অনেক কৃষক আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, দেশের একমাত্র কেরু অ্যান্ড কোম্পানি সব ধরণের মদ উৎপাদন করতে পারে। তবে বাংলা মদ তারা উৎপাদন করতে পারে না। এই মদ তৈরি করতে সম্প্রতি ৪০ লাখ প্লাাস্টিকের বোতল গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়। যেখানে প্রতি পিস বোতল ১৪ টাকা করে কেনা হয়। বিন্তু এই বোতলের বাজার দর ৭ টাকা করে। এক্ষেত্রে প্রতি বোতলে অতিরিক্ত ৭ টাকা বেশি গুণতে হয়েছে সরকারকে। রাব্বি হাসান এবং লিপিকা ভদ্র বোতল ক্রয় করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন, এছাডাও গত বছর ২ লাখ ৪২ হাজার বক্স বিদেশী মদ বিক্রি করা হলেও এ চলতি অর্থ বছর সেখানে বিক্রি দাঁড়িয়েছে ২ লাখে। গত অর্থ বছরে র স্পিরিট উৎপাদন হয়েছিল ৬০ লক্ষ ২৮ হাজার প্রুফ লিটার এ অর্থ বছরে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৪৬লক্ষ প্রুফ লিটার! ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অদক্ষতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সরকারকে এ ঘাটতিতে পড়তে হচ্ছে। অনিয়ম, প্রশাসনকি কর্তৃত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ উঠেছে মীর রাব্বকিরে বিরুদ্ধে। তার একচ্ছত্র আধিপত্য ও অদৃশ্য শক্তির কাছে সৎ র্কমচারী-কর্মকর্তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ডিএনসিকে তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছেন দেশী মদ বোতলজাতকরণ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অ্যালকোহল বিধমিালাকে কোন পাত্তাই দিচ্ছন না রাব্বকি হাসান। তার এসব অনৈতকি কাজে সহযোগতিা করছেনে বাংলাদশে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরশেনের সাবকে চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র।
আরও জানা যায়, গত বছরের ৩১ আগস্ট কেরুর প্রধান ফটক থেকে ১০০ লিটার দেশি মদসহ ট্রাকচালক সাইফুল ইসলাম ও তার দুইজন সহকারীকে র্দশনা থানা পুলশি গ্রেপ্তার করে। আর একই বছররে ১৫ জুলাই র্দশনা থানা পুলিশ রামনগর থেকে ৪০ লিটার দেশি মদসহ বাদল শেখ নামরে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। আর ১৬ ফেব্রæয়ারি দর্শনা পৌর এলাকার আনোয়ারপুরে অভযিান চালিয়ে কেরুর তৈরি ৭৫০ মিলিলিটার পরিমাণ সাত বোতল বিলেতি মদসহ দুজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সম্প্রতি ১শ’ এবং ৫শ’ এমএল বোতলজাতকরণের ক্ষমতা ডিএনসি হতে পেশীশক্তি ব্যবহার করে কান্ট্রি স্পিরটি বা দেশী মদ বোতলজাতকরণের অনুমোদন নেওয়া হলেও বোতলিং লাইসেন্স নেওয়া হয়নি। রাব্বিক হাসানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে প্রায় এক বছরে ধরে অবৈধভাবে মদের বোতলজাতকরণ হচ্ছে। বোতলজাতকরণে ব্যবহৃত নতুন মেশিনের অনুমোদন ছিল শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য। কিন্তু গত ২০২৩ সালে এক বছর মেয়াদের জন্য পরীক্ষামূলক উৎপাদনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সব র্শত ভেঙে নিয়মতি বাণজ্যিকিভাবে মদ বোতলজাত করা হচ্ছ। উচ্চ সুরাশক্তির এ্যালকোহল নিম্ন সুরাশক্তিতে আনার পর ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি আন্ডার প্রুফ দেশী মদ বোতলজাত করে সরবরাহের নিয়ম রয়েছে। তাছাড়াও দেশী মদ বোতলজাত করে পণ্যাগারে সরবরাহে কেন্দ্রীয় রাসায়নকি পরীক্ষাগারের ল্যাবে টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধদিপ্তররে দর্শনার ডিস্ট্রিলারী অফিসার পরির্দশক ছানোয়ার হোসেন কেরুর এসব অমান্য করায় বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরার্মশ চেয়ে গত ২৮ এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধদিপ্তরের র্কমর্কতা বরাবর আবেদন করেছেন।
এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চিনিকলগুলোর মধ্যে একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদশে) লিমিটেড। এটি একটি সমন্বতি কারখানা। এখানে চিনি, ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানটিাইজারসহ বিভিন্ন ধরণের স্পিরিট ও দেশী-বিদেশি মদ উৎপাদন করা হয়। কারখানার মূল পণ্য চিনি হলেও কোম্পানিকেক বাঁচিয়ে রাখছে ডিস্টিলারি পণ্য মদ।
এসব বিষয়ে কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর রাব্বিকের দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসছে তা -ভিত্তিহীন। কেননা প্রতিটি বিষয় আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে।