কেরুজ চিনিকলের ২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মরসুমের উদ্বোধনকালে ড. লিপিকা ভদ্র
- আপডেট সময় : ০৫:০৭:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬২ বার পড়া হয়েছে
শিল্প সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে সকলকে
জালাল উদ্দিন/তহিরুল ইসলামঃ কেরুজ চিনিকলের ২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। বিগত কয়েক মরসুমের মতো এবারো গত মরসুমের ৬১ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে পথ চলা শুরু হলো। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকালে মিলের কেন কেরিয়ার চত্তরে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলের পরপরই ডোঙ্গায় আখ নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে এ মরসুমের উদ্বোধন করা হয়। লোকসানের বোঝা কমিয়ে লাভের আশায় খানেকটা সাদামাটা পরিবেশে ৮৭ তম আখ মাড়াই মরসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র বলেন, আখচাষিদের কথা ভেবেই গত কয়েক মরসুমে আখের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা হয়েছে চিনির মূল্য। চিনি কারখানার অন্যতম কাচামাল আখ। সেক্ষেত্রে চিনি কারখানা বাচিয়ে রাখতে আখচাষের কোন বিকল্প নেই। যুগযুগ ধরে চাষিকূল আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সমৃদ্ধ করেছে। বর্তমান অর্ন্তবর্তিকালীন সরকার কৃষকের সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হাতে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসুচি বস্তবায়ন করছে। এরই মন্ধে ফ্যাসিবাদ সরকারের শাসনামলে বন্ধ করে দেয়া বেশ কয়েকটি চিনিকল চালু করণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তেমনি ভাবে দেশের চিনি শিল্পকে বাচাতে হলে চাষি ভাইদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে এগিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে বেশী বেশী করে আখ চাষের মধ্য দিয়েই সম্ভব দেশের এ মূল্যবান সম্পদ চিনিশিল্পকে রক্ষা করা। মিলের সকল কর্মচারি-কর্মকর্তাকে নিষ্টা ও আন্তরিকতার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হতে হবে। কোন প্রকার দূর্নিতী বরদাস্ত করা হবেনা। শিল্প সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়ত হবে আমাদেরই। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা দায়রা জজ আকবর আলী বলেন, ঐতিহ্যবাহি এ চিনিকলটি এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছে। ছোটবেলায় পাঠ-পুস্তকে এ চিনিকলের কথা পড়েছি। আজ সৌভাগ্য হলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন, সরকারের মূল্যবান এ সম্পদটি চুয়াডাঙ্গা তথা আশপাশ এলাকাকে আলোকিত করে রেখেছে যুগযুগ ধরে। তাই ঐতিহ্যবাহি কেরুজ চিনিকল রক্ষায় সকলকে বেশী বেশী আখ চাষ করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, কেরুজ চিনিকল এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। যা জেলাবাসির জন্য গর্বের। এ গর্ব ধরে রাখতে চিনিকলের সকলকে নিষ্টা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের প্রধান রাসায়নিকবিধ আনিসুল আযম বলেছেন, কেরুজ কমপ্লেক্সে উৎপাদনের আরো মাধ্যম রয়েছে। যা এ জেলাবাসির জন্য সৌভাগ্য বটে। প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল করিম বলেন, ৮৬ বছর বয়সি এ মিলটি আধুনিকায়নের কাজ খুব শ্রিগ্রই হয়তো শেষ হবে। সেক্ষেত্রে লাভের মুখ দেখার সম্ভবনায় থাকবে বহুগুনে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক বলেন, ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারের আমলে দূর্নিতীর মহাউৎসব ছিলো সর্বস্থরে। আমরা তা হতে দেবোনা। দূর্নিতীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছে ছাত্র-জনতা। সেক্ষেত্রে কেরুজ চিনিকলে দূর্নিতী হলে আমরা দেখভাল করবো। দূর্নিতীবাজ যেই হোক কোন ছাড় পাবেনা। কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভূইয়ার উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ মহল, দর্শনা পৌর প্রশাসক, দামুড়হুদা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কেএইচ তাসফিকুর রহমান, দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয়ক কমিটির প্রধান হাবিবুর রহমান বুলেট, সমন্বয়ক নাহারুল ইসলাম মাস্টার, আখচাষি কল্যান সংস্থার সভাপতি সাংবাদিক শরীফ উদ্দীন, কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আল ফারুক ওমর শরীফ গালিব, মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন সাহা, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারী) রাজিবুল হাসান, মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আব্দুছ ছাত্তার, ডিজিএম (সম্প্রসারণ) মাহবুবুর রহমান, শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ, সহ-সভাপতি মফিজুর রহমান, যুগ্ন-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী, হাফিজুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, যুগ্ন-সম্পাদক খবির উদ্দিন প্রমুখ। এ সময় প্রধান অতিথি সেরা আখচাষির পুরস্কার তুলে দেন, ভেড়ামারার ইসমাইল হোসেন, মনোহারপুরের আলম হোসেন ও শৈলমারির আকরাম মোল্লা। সর্বচ্চ আখচাষের পুরস্কার দেন, উথলীর শামীম হোসেন, আফজাজুল হক ধীরু ও লোকনাথপুরের শাহ গোলাম সরোয়ারকে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বের বক্তব্যে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান এ মাড়াই মরসুম সফল করতে সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন। সেই সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিষ্টা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কৃষকদের প্রতি বেশী বেশী আখচাষের আহ্বান করেছেন। অধিক ফলন ও মুনাফার জন্য দা-হাসুয়া দিয়ে নয়, কোদালের সাহায্যে আখ কর্তনের অনুরোধ করেন। পবিত্র কোরআন তেলোয়াত করেন কেরুজ জামে মসজিদের পেশ ইমাম। আলোচনা পর্ব ও দোয়া পরিচালনা শেষে মিলের ডোঙায় আখ নিক্ষেপের মাধ্যমে চলতি মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ড. লিপিকা ভদ্র সহ অতিথিরা। করপোরেশনের লক্ষমাত্রা অনুযায়ি এ মরসুমে নির্ধারিত ৫ হাজার ১শ একর জমিতে আখচাষ রয়েছে। যার মধ্যে কৃষকের জমির পরিমান ৩ হাজার ৪৫৫ ও কেরুজ নিজস্ব জমিতে রয়েছে ১ হাজার ৬৪৫ একর আখ। ৬৫ মাড়াই দিবসে ৭০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করতে হবে। যার গড় মাড়াই হার ১ হাজার ১৫০ মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারিন করা হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ। চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা রয়েছে ৪ হাজার ২শ মেট্রিকটন। আগামি মাড়াই মরসুমের লক্ষ্যে এবারের আখ রোপন মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর। রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে ৬ হাজার একর জমিতে। যার মধ্যে কৃষকের জমি ৪ হাজার ৩৯৬ ও কেরুজ নিজস্ব জমির পরিমান ১ হাজার ৬০৪ একর জমি। এদিকে শুক্রবার সকালে চিনিকলের কর্মকর্তাদের সাথে করেছেন সৌজন্য বৈঠক। বেলা ১১ টার দিকে ড. লিপিকা ভদ্র কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে কেরুজ ডিস্টিলারী বিভাগে ফরেণ লিকারের আধুনিক মেশিন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এর আগে তিনি বিভিন্ন কৃষকদের জমিতে করেছেন ইক্ষু রোপন উদ্বোধন। দুপুর ১২ টার দিকে আকন্দবাড়িয়া মাঠে হারভেস্টারের মাধ্যমে আখ কর্তন পরিদর্শন করেন। রাত ৯ টার দিকে তিনি গাড়ী বহর যোগে কেরুজ অতিথি ভবন ত্যাগ করেছেন রেইন উইকের উদ্দেশ্যে। শনিবার কুষ্টিয়া চিনিকল পরিদর্শন করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে জানা গেছে।