দর্শনা ০৫:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই সভাপতি, রাইজিং ফ্যাসনস লিমিটেডের এমডি মাহমুদ হাসান খাঁন বাবু। যশোরে পতিত স্বৈরাচারের অনুগত আ’লীগের চেয়ারম্যানরা পালিয়ে থাকার পর এবার বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় ফিরতে শুরু করেছে। পতিত স্বৈরাচারের লেসপেন্সাররা এবার জমা জমি বিক্রি করে দেশের বাইরে পালাচ্ছে। ফেরিতে জুয়ার ফাঁদে ছিনতাই। জীবননগরে যৌথবাহিনীর অভিযানে ইউপি সদস্যসহ আটক ৩। এক নারীর এক্সিলা রিজিয়নের গুরুতর অপারেশন নিয়ে ধোঁয়াশা অপারেশন নোট নেই, সমালোচনা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এঁর ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত। দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর সভাপতি মশিউর রহমান। টঙ্গী রেল স্টেশন থেকে ৭ হাজার পিচ ইয়াবা সহ ১ নারীকে গ্রেফতার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেল কলেজছাত্রীর।

ফেরিতে জুয়ার ফাঁদে ছিনতাই।

  • আপডেট সময় : ০৬:৫৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ ৪০১ বার পড়া হয়েছে

পাটুরিয়া প্রতিনিধিঃ
ফেরিতে লুটপাটের পর আরেক ফেরিতে ওঠে দুর্বৃত্তরা। তিন রাতের অনুসন্ধানে মিলেছে সত্যতা। সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনির বাসিন্দা ব্যবসায়ী সজীব চক্রবর্তী। ১৬ মে রাত ১২টার দিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। তিনি সাভার থেকে পাটুরিয়া হয়ে রাজবাড়ী যাওয়ার পথে ফেরিতে নদী পার হচ্ছিলেন। ফেরিতে ওঠার পর জুয়ার ফাঁদে ফেলে তাঁর কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা ও একটি সোনার আংটি ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া অন্য যাত্রীদের টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পালিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।

শুধু ১৬ মে নয়, এই নৌপথে রাতে চলাচলকারী ফেরিতে তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে নিত্যদিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না জুয়া ফাঁদের ছিনতাই। সজীব চক্রবর্তী বলেন, ‘ফেরিটি খানজাহান আলী পাটুরিয়া ঘাট ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ১০-১২ জন লোক পেছন দিক থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত জেলে নৌকায় করে এসে ফেরিতে ওঠেন। একপর্যায়ে তাঁদের কয়েকজন কুপি একধরনের বাতি জ্বালিয়ে ফেরির ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের মাঝের ফাঁকা স্থানে তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পাতেন। যাত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রথমে তাঁরা নিজেদের লোকদের জিতিয়ে দেখান। তা দেখে আমিসহ কয়েকজন যাত্রী লোভের বসে তাঁদের পাতানো ফাঁদে ধরা দেওয়া মাত্র তাঁরা আমাদের টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। মাত্র ৭ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে ফেরি থেকে নেমে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান তাঁরা।

ফেরি খানজাহান আলীতে যাত্রীদের টাকা ও মালপত্র লুটের ঘটনার পর বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য শাপলা নিউজ ২৪ এর প্রতিবেদক ১৭, ১৮ ও ১৯ মে রাতে ফেরি ভাষাশহীদ বরকত, ফেরি কেরামত আলী, ফেরি রুহুল আমিন, ফেরি খানজাহান আলী, ফেরি এনায়েতপুরী ও ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানসহ আরও কয়েকটিতে একাধিকবার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাতায়াত করেন। এ সময় তিন তাসের মাধ্যমে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন তিনি।

১৮ মে রাত ৯টার দিকে ফেরি ভাষাশহীদ বরকত দৌলতদিয়ার উদ্দেশে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাট ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ৫ থেকে ৭ জন ছিনতাইকারী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে এসে ওই ফেরিতে ওঠে। এরপর তাঁরা তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের আকৃষ্ট করে তাঁদের টাকা ও মালপত্র লুটে নেয়। এ সময় যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদের অনেকে সেখানে উপস্থিত থাকলেও ভয়ে ছিনতাইয়ের শিকার যাত্রীদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে যাননি। তবে খবর পেয়ে পাটুরিয়া নৌ-ফাঁড়ি পুলিশের একটি দল ওই ফেরিতে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের আমজাদ মণ্ডল ৪০ ও জহির ফকির ৪১ নামে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে। বাকিরা ফেরি থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে যায়।

জানতে চাইলে ফেরি ভাষাশহীদ বরকতের মাস্টার সাইফুল ইসলাম বলেন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে প্রায় প্রতি রাতেই বিভিন্ন ফেরিতে তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের টাকা ও মালপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। দুর্বৃত্তরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে এসে এক ফেরিতে লুটপাট করে আবার আরেক ফেরিতে ওঠে। এভাবে প্রায় সারা রাতই তাণ্ডব চালায় তাঁরা। কিন্তু সে তুলনায় পুলিশের তৎপরতা খুবই কম।
১৯ মে রাতে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া যাওয়ার পথে ফেরি কেরামত আলীতে ছিনতাইয়ের শিকার যাত্রী শাজাহান মিয়া বলেন আমি দেখলাম ফেরির ওপরে অন্ধকার জায়গায় কয়েকজন লোক তিন তাস দিয়ে খেলছেন। যাঁরা খেলছে তাঁরা হারছেন আর যাঁদের খেলাচ্ছেন তাঁরা জিতছেন। আমার মতো আরও কয়েকজন পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। লোভে পড়ে আমরাও খেলি কিন্তু আমরা জিততে পারিনি। শাজাহান আরও বলেন টাকা হেরে যাওয়ার পরও আমার পকেট থেকে ওরা মানি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। মানি ব্যাগে ৬ হাজার টাকা ছিলো। আমি ওদের আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। ওরা ছুরি দিয়ে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করলে আমি ছেড়ে দিই। এরপর আমি ওদের ধরার জন্য চিৎকার করি উপস্থিত লোকজনের সাহায্য চাইলাম কিন্তু ভয়ে কেউ এগিয়ে এলো না।

বিষয়টি ফেরি কেরামত আলীর দ্বিতীয় মাস্টার একলাস উদ্দিনকে জানানো হলে তিনি বলেন এটা দৈনিক রাতের ঘটনা। মাঝে ওদের উৎপাত একটু করেছিলো। কিন্তু কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আবারও বেড়ে গেছে। একলাস উদ্দিন আরও বলেন চক্রের ৭ থেকে ১০ জনের একটি দল রাতে ইঞ্জিনচালিত জেলে নৌকা নিয়ে নদীতে অবস্থান করে। যেখানে জালসহ মাছ ধরার সব সরঞ্জাম থাকে যাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন দেখলে মনে করে তারা জেলে। বাকিরা ভাগ হয়ে ৪ থেকে ৫ জন করে প্রতিটি ফেরিতে অবস্থান নিয়ে নজরদারি করে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ফেরি থেকে নদীতে থাকা দলকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়। এরপর নদীতে থাকা দলের সদস্যরা ফেরিতে উঠে যাত্রীদের টাকা ও মালপত্র ছিনিয়ে নেই।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের বিআইডব্লিউটিসি আরিচা এরিয়া অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক ডিজিএম নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো সুফল পাচ্ছি না। এ অবস্থায় সর্বশেষ ১২ মে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ নৌ পুলিশকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাটুরিয়া নৌ ফাঁড়ি পুলিশের ওসি কে এম নজরুল বলেন একটি সংঘবদ্ধ চক্র ফেরিতে তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের টাকা ও মালপত্র লুটে নেয়। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আমরা তাঁদের দমনে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ফেরিতে জুয়ার ফাঁদে ছিনতাই।

আপডেট সময় : ০৬:৫৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

পাটুরিয়া প্রতিনিধিঃ
ফেরিতে লুটপাটের পর আরেক ফেরিতে ওঠে দুর্বৃত্তরা। তিন রাতের অনুসন্ধানে মিলেছে সত্যতা। সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনির বাসিন্দা ব্যবসায়ী সজীব চক্রবর্তী। ১৬ মে রাত ১২টার দিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। তিনি সাভার থেকে পাটুরিয়া হয়ে রাজবাড়ী যাওয়ার পথে ফেরিতে নদী পার হচ্ছিলেন। ফেরিতে ওঠার পর জুয়ার ফাঁদে ফেলে তাঁর কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা ও একটি সোনার আংটি ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া অন্য যাত্রীদের টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পালিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।

শুধু ১৬ মে নয়, এই নৌপথে রাতে চলাচলকারী ফেরিতে তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে নিত্যদিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না জুয়া ফাঁদের ছিনতাই। সজীব চক্রবর্তী বলেন, ‘ফেরিটি খানজাহান আলী পাটুরিয়া ঘাট ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ১০-১২ জন লোক পেছন দিক থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত জেলে নৌকায় করে এসে ফেরিতে ওঠেন। একপর্যায়ে তাঁদের কয়েকজন কুপি একধরনের বাতি জ্বালিয়ে ফেরির ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের মাঝের ফাঁকা স্থানে তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পাতেন। যাত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রথমে তাঁরা নিজেদের লোকদের জিতিয়ে দেখান। তা দেখে আমিসহ কয়েকজন যাত্রী লোভের বসে তাঁদের পাতানো ফাঁদে ধরা দেওয়া মাত্র তাঁরা আমাদের টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। মাত্র ৭ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে ফেরি থেকে নেমে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান তাঁরা।

ফেরি খানজাহান আলীতে যাত্রীদের টাকা ও মালপত্র লুটের ঘটনার পর বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য শাপলা নিউজ ২৪ এর প্রতিবেদক ১৭, ১৮ ও ১৯ মে রাতে ফেরি ভাষাশহীদ বরকত, ফেরি কেরামত আলী, ফেরি রুহুল আমিন, ফেরি খানজাহান আলী, ফেরি এনায়েতপুরী ও ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানসহ আরও কয়েকটিতে একাধিকবার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাতায়াত করেন। এ সময় তিন তাসের মাধ্যমে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন তিনি।

১৮ মে রাত ৯টার দিকে ফেরি ভাষাশহীদ বরকত দৌলতদিয়ার উদ্দেশে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাট ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ৫ থেকে ৭ জন ছিনতাইকারী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে এসে ওই ফেরিতে ওঠে। এরপর তাঁরা তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের আকৃষ্ট করে তাঁদের টাকা ও মালপত্র লুটে নেয়। এ সময় যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদের অনেকে সেখানে উপস্থিত থাকলেও ভয়ে ছিনতাইয়ের শিকার যাত্রীদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে যাননি। তবে খবর পেয়ে পাটুরিয়া নৌ-ফাঁড়ি পুলিশের একটি দল ওই ফেরিতে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের আমজাদ মণ্ডল ৪০ ও জহির ফকির ৪১ নামে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে। বাকিরা ফেরি থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে যায়।

জানতে চাইলে ফেরি ভাষাশহীদ বরকতের মাস্টার সাইফুল ইসলাম বলেন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে প্রায় প্রতি রাতেই বিভিন্ন ফেরিতে তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের টাকা ও মালপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। দুর্বৃত্তরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে এসে এক ফেরিতে লুটপাট করে আবার আরেক ফেরিতে ওঠে। এভাবে প্রায় সারা রাতই তাণ্ডব চালায় তাঁরা। কিন্তু সে তুলনায় পুলিশের তৎপরতা খুবই কম।
১৯ মে রাতে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া যাওয়ার পথে ফেরি কেরামত আলীতে ছিনতাইয়ের শিকার যাত্রী শাজাহান মিয়া বলেন আমি দেখলাম ফেরির ওপরে অন্ধকার জায়গায় কয়েকজন লোক তিন তাস দিয়ে খেলছেন। যাঁরা খেলছে তাঁরা হারছেন আর যাঁদের খেলাচ্ছেন তাঁরা জিতছেন। আমার মতো আরও কয়েকজন পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। লোভে পড়ে আমরাও খেলি কিন্তু আমরা জিততে পারিনি। শাজাহান আরও বলেন টাকা হেরে যাওয়ার পরও আমার পকেট থেকে ওরা মানি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। মানি ব্যাগে ৬ হাজার টাকা ছিলো। আমি ওদের আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। ওরা ছুরি দিয়ে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করলে আমি ছেড়ে দিই। এরপর আমি ওদের ধরার জন্য চিৎকার করি উপস্থিত লোকজনের সাহায্য চাইলাম কিন্তু ভয়ে কেউ এগিয়ে এলো না।

বিষয়টি ফেরি কেরামত আলীর দ্বিতীয় মাস্টার একলাস উদ্দিনকে জানানো হলে তিনি বলেন এটা দৈনিক রাতের ঘটনা। মাঝে ওদের উৎপাত একটু করেছিলো। কিন্তু কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আবারও বেড়ে গেছে। একলাস উদ্দিন আরও বলেন চক্রের ৭ থেকে ১০ জনের একটি দল রাতে ইঞ্জিনচালিত জেলে নৌকা নিয়ে নদীতে অবস্থান করে। যেখানে জালসহ মাছ ধরার সব সরঞ্জাম থাকে যাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন দেখলে মনে করে তারা জেলে। বাকিরা ভাগ হয়ে ৪ থেকে ৫ জন করে প্রতিটি ফেরিতে অবস্থান নিয়ে নজরদারি করে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ফেরি থেকে নদীতে থাকা দলকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়। এরপর নদীতে থাকা দলের সদস্যরা ফেরিতে উঠে যাত্রীদের টাকা ও মালপত্র ছিনিয়ে নেই।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের বিআইডব্লিউটিসি আরিচা এরিয়া অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক ডিজিএম নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো সুফল পাচ্ছি না। এ অবস্থায় সর্বশেষ ১২ মে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ নৌ পুলিশকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাটুরিয়া নৌ ফাঁড়ি পুলিশের ওসি কে এম নজরুল বলেন একটি সংঘবদ্ধ চক্র ফেরিতে তিন তাস দিয়ে জুয়ার ফাঁদ পেতে যাত্রীদের টাকা ও মালপত্র লুটে নেয়। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আমরা তাঁদের দমনে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।