চিনির পরিবর্তে আমরা খাচ্ছি মেগনেসিয়াম সালফেট : চকচকে মোড়কে বিদেশী সাদা ধবধবে ঘন চিনি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর
- আপডেট সময় : ০২:০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০ বার পড়া হয়েছে
জালাল উদ্দিনঃ দেশীয় উৎপাদিত পণ্য, কিনে হই ধন্য এ প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখেই দেশের স্বার্থে দেশী চিনির বিকল্প ভাবনা পরিহার করি। মানবদেহের জন্য চরমভাবে ক্ষতিকর ঘন চিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট। এ চিনির দাম কমাতে সঙ্গে মেশানো হয় বিষাক্ত সার ম্যাগনেসিয়াম সালফেট। এ যেন বিষের সথে বিষ মিশিয়ে বানানো ‘বিকল্প চিনি’। সাদা ধবধবে দেখতে সুন্দর এ ‘বিকল্প চিনি’র এক কেজিতে ৫০ কেজি আসল চিনির কাজ হয়। এই ভেজাল ঘন চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য, চকোলেট, আইসক্রিম, কনডেন্সড মিল্ক, বেকারি ও বেভারেজ দ্রব্য। বিষ মেশানো এসব খাবার খেয়ে ক্যান্সার, কিডনি বিকল, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মানব দেহের জন্য চরম ক্ষতিকর ওই চিনির কারণে কোন প্রকার ভেজাল না দেয়া দেশে উৎপাদিত চিনির কদর কমেছে। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান জানান, স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ঘন চিনি ভিন্ন ভিন্ন নামে আমদানি করছে এক শ্রেনীর আমদানিকারক। সাইট্রিক এসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ঘোষণা দিয়ে এসব ঘন চিনি আমদানি করা হচ্ছে। কারণ এই তিনটি পণ্য দেখতে হুবহু ঘন চিনির মতো। এ চিনির শুল্কহারও অনেক কম, কিন্তু স্বাদে রয়েছে পার্থক্য। এ ঘন চিনি ক্যান্সারসহ নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে থাকে, যে কারণে ১৯৬০ সালে যুক্তরাজ্য এবং ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র এ চিনি ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বাংলাদেশেও এ রাসায়নিক আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু দেখতে একই রকম হওয়ায় সাইট্রিক এসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট নাম দিয়ে দেশে এ রাসায়নিক আমদানি করছে কোন কোন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বেশি লাভের আশায় এসব পণ্য আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্দোগ নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজর দেয়া উচিত বলে দাবী করেছে সচেতন মহল। সর্বনাশা বিদেশী বিষাক্ত চিনির ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে হলেও দেশীয় চিনির উৎপাদন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন বাচাতে হবে সরকারের মূল্যবান সম্পদ চিনিশিল্প, অন্যদিকে বেশী বেশী আখচাষের মাধ্যমে চিনির খাটতি পূরণ করতে হবে। বেশী বেশী আখচাষের দিকে ঝুকে পড়তে হবে কৃষকদের। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কিছু বছর আগে দেশের সকল চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের আখচাষ বাধ্যতা মূলক করলে সে নিয়ম বেশীদিন টেকিনি। চিনিকলের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ আখচাষ না করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত সে সময় অনেকটাই সাড়া মিললে এখন তা হারিয়েছে তিমিরে। তবে সুধি মহল মনে করছে, আখের দাম বাড়ানো ও কৃষকের দূর্ভোগ লাঘব সহ কৃষি সেবা নিশ্চিত করলে আখচাষ অবশ্যই বাড়বে। এ দিকে কেরুজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান আরো বলেছেন, কৃষকদের কথা ভেবেই সরকার বহুগুনে আখের মূল্য বাড়িয়েছে। সেই সাথে কৃষকদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। আখের পূর্জি ও আখের মূল্য পরিশোধে আধুনিক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমেই কৃষকরা তাদের আখের মূল্য ঘরে বসে পেয়ে যাচ্ছে। আখ রোপনের ক্ষেত্রে কৃষিপন্য সরবরাহের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। আখচাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। দফায় দফায় সভা-সমাবেশ সহ চাষিদের নিয়মিত খোজ খবর রাখছেন কেরুজ চিনিকলের কর্মকর্তারা। ২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মরসুমে করপোরেশনের লক্ষমাত্রা অর্জনের চেষ্টার পাশাপাাশি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিষ্টা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার আহ্বান করা হয়েছে। চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জনের ব্যপারে কেরুজ কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই বলে মনে করে কৃষককূল। এ ছাড়া এবারের আখ মাড়াই মরসুমে কৃষকদের কোদালের সাহায্যে আখ কর্তনের আহ্বান করা হয়েছে। এতে আখের ফলন বৃদ্ধিতে কৃষক লাভবান হবে, চিনিকলে বাড়বে চিনি আহরণের হার।