মেহেরপুরের বীজ কেন্দ্রে পরিবহন দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ।
- আপডেট সময় : ০৩:৫৬:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪১ বার পড়া হয়েছে
আইন না মেনে প্রাক্কলিত ব্যয় অস্বাভাবিক কম দেখানো প্রতিষ্ঠানই পেলেন কাজ, বীজ পরিবহন নিয়ে শঙ্কা
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:-
মেহেরপুরের বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে (বিপ্র) বীজ পরিবহন (২০২৫-২৬ অর্থবছর) দরপত্রে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে প্রাক্কলিত ব্যয়ের থেকে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ কম দর দেখানো দরদাতাকে কাজ দেয়া হয়েছে। ফলে একদিকে আইনের লঙ্ঘন অন্যদিকে বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছে বীজ পৌছানোতেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দাবি উঠেছে, পুনঃদরপত্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করে নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের।
জানাগেছে, মেহেরপুরের বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে (বিপ্র) এর উপপরিচালক মোঃ হাফিজুল ইসলাম গত ১৭ই আগস্ট ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে বীজ পরিবহনে উম্মুক্ত দরপত্রের আহ্বান করেন। মোট আটজন দরপত্র উত্তোলন করলেও গত ২ সেপ্টেম্বর দরপত্র জমাদানের শেষদিনে মাত্র দুটি দরপত্র জমা পড়ে। অবাক করার বিষয় দুটি দরপত্রেই প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারিত ১০ শতাংশের থেকে অধিক কম দেখানো হয়। বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পরিমাণ বা শতাংশের বেশি বা কম মূল্যের পার্থক্য হলে দরপত্র বাতিল করা হবে। এই আইনের ৩১ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী ‘উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির অধীন অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন দরদাতা কর্তৃক দরপত্রের দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় (Official cost estimate) ১০% (শতকরা দশ ভাগ) এর অধিক কম বা অধিক বেশি দর উদ্ধত করা হইলে উক্ত দরপত্র বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।’
মেহেরপুরের বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে (বিপ্র) এর উপপরিচালক এর কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ২ সেপ্টেম্বর দরপত্র খোলা হয়। আইন অনুযায়ী দরপত্র বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও প্রাক্কলিত ব্যায় অধিক কম দেয়া প্রতিষ্ঠান মেহেরপুর বারাদীর পণ্ডিত ট্রেডার্সকে কাজ দেয়া হয়। আইন অনুযায়ী ১০ শতাংশ কম বা বেশি দর ধরার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ কম দর ধরেছেন।
কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে দেখা গেছে, যে দরপত্রটির জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে, সেটিতে রয়েছে নানা অসঙ্গতি ও অনিয়ম। অনেক ক্ষেত্রেই প্রাক্কলিত ব্যয়ের থেকে অধিক কম দর দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, “মেহেরপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার, অথচ প্রতি টনের ভাড়া ধরা হয়েছে এক হাজার টাকা। আবার মেহেরপুর থেকে ঝিনাইদহের দূরত্ব মাত্র ৬৫ কিলোমিটার, তাতে ভাড়া ধরা হয়েছে ৯০০ টাকা। প্রায় তিনগুণ বেশি দূরত্বের জন্য ভাড়া মাত্র ১০০ টাকা বেশি, যা যৌক্তিক নয়।
একজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেন, ‘আমাদের শিডিউলে যদি একটি পয়েন্টেও এ ধরনের অযৌক্তিক রেট থাকে, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার বাতিল হয়ে যায় এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ১৭ শতাংশ PPR অনুযায়ী জরিমানা আরোপ করার বিধানও আছে। তাই আমরা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি, এই টেন্ডারটি পুনর্মূল্যায়ন করা হোক এবং অন্যায়ভাবে নির্ধারিত রেটের কারণে টেন্ডারটি বাতিল করে নতুনভাবে পুনঃটেন্ডার আহ্বান করা হোক।”
আরকেজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেন, ‘আইনের বাইরে গিয়ে উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম এই কাজটি কেন করলেন, সেটি আমরা বুঝতেছি না। আমাদের ধারণা তার সাথে ঠিকাদারের কোনো যোগসাজস আছে। গত বছর চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে এই একই কারণে পুনঃদরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এই যে ঠিকাদার এতো কম মূল্য দিলেন, এতে করে কাজের সময় তিনি নানা ঝামেলা করবেন। বোরো মৌসুমে তো বীজ কৃষকদের কাছে পৌছাতে সমস্যা হবে। বলা যায়, সেটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলো।
এসব বিষয়ে মেহেরপুরের বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে (বিপ্র) এর উপপরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসিয়ার নম্বরে একাধীকবার কল দিলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি। এ সময় ওই কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক (বিপ্র) ও দরপত্র কমিটির সদস্য সচিব এটিএম আরিফুর রহমানকে পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দরপত্র সম্পর্কে আমার কাছে তথ্য নেই। এখন অফিসে ডিডি স্যার ও ক্যাশিয়ার কেউ নেই। তাদের কাছে কাগজপত্র। তারা আসলে কাগজপত্র দেখে বলতে পারবো। আর এ বিষয়ে জানতে কমিটির সভাপতির সাথে যোগাযোগ করলে ভালো হয়। আমি এই কমিটির সদস্য সচিব।’ এ সময় প্রাক্কলিত ব্যয় অস্বাভাবিক কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যেটা বলছেন, এই কারণে একবার একটি দরপত্র বাতিল আমি দেখেছি। তবে এবার আমি এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাইনি। আরও ভালো করে দেখতে হবে। তাছাড়া, আমরা দরপত্র খোলার পর রেজুলেশন করে পাঠিয়েছি। অনুমোদন দেবে ঢাকা। তারাও এসব বিষয় পর্যালোচনা করবে।’
বিএডিসির অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ) মোশাব্বের হোসেন বলেন, ‘আইনের বাইরে গিয়ে কমিটির কাজ করার সুযোগ নেই। পিপিআর অনুসারেই কাজটি করতে হবে। এখনো এগুলো আমাদের কাছে এসে পৌছায়নি। কাল হয়ত হাতে পাবো। আপনারা কমিটির কাছ থেকেও তথ্য নেন। আমি বিষয়টি দেখবো। পিপিআর এর বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব না।’